নেত্রকোণা - বাংলার উত্তর-পূর্ব কোণে অবস্থিত এক অপরূপ জেলা, যার প্রকৃতি, সংস্কৃতি ও ইতিহাস একে করেছে অনন্য। সবুজে ঘেরা পাহাড়, নদী ও হাওরের অসীম জলরাশি মিলে এটি যেন এক প্রাকৃতিক লীলাভূমি। এখানে যেমন রয়েছে অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, তেমনি রয়েছে গৌরবময় ইতিহাস আর ঐতিহ্যের দীপ্ত ছাপ।
ভ্রমণপিপাসুদের জন্য নেত্রকোণা
নেত্রকোণা প্রকৃতির অপার দানে সমৃদ্ধ। এই জেলায় রয়েছে চীনামাটির পাহাড়, বিভিন্ন জাতের মাছ ও কৃষিজ সম্পদ। সীমান্তবর্তী সবুজে ঘেরা চন্দ্রডিঙা পাহাড়, ঐতিহাসিক রোয়াইল বাড়ি, বিস্তৃত হাওর এবং শাহ সুলতান কমর উদ্দিন রুমীর মাজার - সব মিলিয়ে এটি ভ্রমণপিপাসুদের জন্য অপরূপ ভূমি।
নেত্রকোনার গুণীজন
নেত্রকোণার মানুষ যেমন পরিশ্রমী, তেমনি সৌখিন ও সংস্কৃতিমনস্ক। এই জনপদের বাতাসে মিশে আছে জালাল, রশিদ উদ্দিন ও উকিল মুন্সির গান। এখানেই জন্মেছেন অগণিত বীর, শিক্ষাবিদ, কবি-লেখক, আইনজীবী ও সংস্কৃতিসেবক, যাঁরা নিজেদের কর্মে নেত্রকোণাকে করেছেন গর্বিত।
নেত্রকোণার ঐতিহ্য ও কৃষ্টি
এই জেলার মানুষের জীবনধারায় মিশে আছে হাজার বছরের কৃষ্টি। ষাঁড়ের লড়াই, গ্রামীণ মেলা, লোকসংগীত, আর ঐতিহ্যবাহী খাবার - এমনি নানা উপকরণে সজ্জিত আমাদের ঐতিহ্য।
ভূগোল ও জনসংখ্যা
নেত্রকোনা জেলার আয়তন - ২৭৯৪.২৮ বর্গ কিঃ মিঃ
নেত্রকোনার উত্তরে ভারত, দক্ষিণে কিশোরগঞ্জ জেলা, পূর্বে সুনামগঞ্জ জেলা এবং পশ্চিমে ময়মনসিংহ জেলা।
নেত্রকোণা জেলার মোট জনসংখ্যা - ২৩,২৩,১৮৭ জন। তার মধ্যে পুরুষ- ১১,৮৪,৩০৮ জন, নারী-১১,৩৮,৬৬০জন (২০২২ সনের আদম শুমারি অনুযায়ী)
ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী
নেত্রকোণা জেলায় রয়েছে গারো, সাঁওতাল, হাজং সহ বিভিন্ন ক্ষুদ্র নৃ গোষ্ঠী। তাদের পরিবারের সংখ্যা- ৬০৬৯টি, জনসংখ্যা-২৫,২৪৭ জন (২০২২ সনের আদম শুমারি অনুযায়ী)
প্রশাসনিক কাঠামো
নেত্রকোণা জেলার দশটি উপজেলা রয়েছে - নেত্রকোণা সদর, বারহাট্টা, পূর্বধলা, কেন্দুয়া, আটপাড়া, কলমাকান্দা, দুর্গাপুর, মোহনগঞ্জ, মদন, খালিয়াজুরী।
নেত্রকোণা জেলার সীমান্তবর্তী উপজেলা দুইটি - দুর্গাপুর ও কলমাকান্দা। নেত্রকোণা জেলার পাঁচটি পৌরসভা রয়েছে - নেত্রকোণা পৌরসভা, কেন্দুয়া পৌরসভা, দুর্গাপুর পৌরসভা, মোহনগঞ্জ পৌরসভা, মদন পৌরসভা। নেত্রকোণা জেলায় ৮৬ টি ইউনিয়ন ও ২,২৮২ টি গ্রাম রয়েছে। (২০২২ সনের আদম শুমারি অনুযায়ী)
নদীমাতৃক নেত্রকোণা
এই জেলায় ৪৪ টি নদী রয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম - কংস, সোমেশ্বরী, ধনু, মগড়া।
স্বাধীনতা সংগ্রামে নেত্রকোণা
এই জেলার মানুষ শোষণের বিরুদ্ধে আপোষহীন। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন থেকে ১৯৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ এই জেলার মানুষ ঝাঁপিয়ে পড়েছিল অন্যায়ের প্রতিবাদে। বহু মানুষের আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমাদের এই স্বাধীনতা। মুক্তিযুদ্ধের সময় নেত্রকোণা ১১ নং সেক্টরে ছিল। ৯ ডিসেম্বর নেত্রকোণা জেলা হানাদার মুক্ত হয়।