ভূমিকা:
ছত্তার পাগলা বা ছাত্তার বাউলা ছিলেন এক স্বতন্ত্র ধারার মরমি বাউল চারণকবি। নেত্রকোণার সাংস্কৃতিক ইতিহাসে তিনি এক উজ্জ্বল অধ্যায়। সাবলীল সুরে ও নিজের ভাষায় জীবনবোধ তুলে ধরার ক্ষমতার জন্য তিনি পরিচিত ছিলেন ‘পাগলা’ উপাধিতে।
জন্ম ও জন্মস্থান
ছত্তার পাগলা আনুমানিক ১৯২৭ সালে নেত্রকোণার বারহাট্টা উপজেলার নুরুল্লাচর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। যদিও তার জীবনের বেশিরভাগ সময় কেটেছে মোহনগঞ্জের কংস নদীর তীরে।
শিক্ষা জীবন
তিনি ছিলেন নিরক্ষর, কিন্তু তার জীবনচর্চা ও কাব্যপ্রতিভা ছিল সহজাত। নিজস্ব চিন্তা ও অনুভূতিতে সমৃদ্ধ ছত্তার ছিলেন কথ্যভাষার কবি।
কর্মজীবন
তিনি এক স্বতন্ত্র ধারার স্বভাব কবি, একান্ত নিজস্ব উচ্চারন ও শব্দে কঠিন বিষয়কে তাঁর মত করে তুলে ধরতেন। অনেক গবেষকের মতে তিনি দেশের লোকজ ধারার অনন্যা প্রতিভা যেটির আর দ্বিতীয়টি কেউ নেই। তার গানে একটা নিজস্ব ভঙ্গিমা আছে, যা অন্য কারো গানে নাই। হতদরিদ্র, নিরক্ষর ছত্তার পাগলা মুখে মুখেই তাৎক্ষণিক রচনা করতেন এবং গানে সুর বাঁধতেন। সেই গান মোহনগঞ্জ, বারহাট্টা ও নেত্রকোণা শহরের পথেঘাটে গেয়ে বেড়াতেন। তার গানে ও কথায় নেত্রকোণা অঞ্চলের লোকভাষা ধরা পড়ে। সে ভাষার একটা মায়া ও মুগ্ধতা আছে।
গান গাওয়ার সময় তার কন্যার হাতে থাকতো ডুগডুগি আর তার হাতে থাকতো নিজের হাতে বানানো বিশেষ এক ধরনের বাঁশি। বাস্তবিক জীবনে তিনি ছিলেন অত্যন্ত সহজ সরল একজন মানুষ। বাউলশিল্পী অন্ধ ওলিদ মিয়া বলছিলেন যে, ছত্তার পাগলার গানের রীতি এখানকার বাউলগানের রীতির চেয়ে সম্পূর্ণ আলাদা। তিনি গান করছেন খঞ্জরী বাজিয়ে। কিন্তু যারা বাউল গান করেন তাদের যন্ত্রপাতি আলাদা, রীতিও আলাদা।
পুরস্কার ও স্বীকৃতি
প্রাতিষ্ঠানিক কোনো বড় স্বীকৃতি না পেলেও লোকমুখে তিনি পরিচিত ছিলেন 'পাগলা ছত্তার' নামে।
মৃত্যু: ছত্তার পাগলা ২০১৪ সালের ১৭ এপ্রিল ইন্তেকাল করেন।
উপসংহার
ছত্তার পাগলা গান করতেন হাটে বাজারে মাঠে ঘাটে। স্থানীয় শিল্পীরা তাকে অনেকসময় গ্রহণ করতে পারতেন না। এজন্য তিনি কম অবহেলার শিকার হননি। অথচ ছত্তার পাগলার মূল বৈশিষ্ট্য জীবনঅভিজ্ঞতাকে আঞ্চলিক ভাষায় গানে তুলে ধরা।অবদান
সহায়ক গ্রন্থ:
১। নেত্রকোণা জেলা চরিতকোষ – অনুপ সাদি ও দোলন প্রভা – ২০২৪
২। নেত্রকোণার বাউল কবি, হামিদুর রহমান, অয়ন প্রকাশন, ঢাকা, প্রথম প্রকাশ আগস্ট ২০১৮
৩। গানপার.কম, আলফ্রেড আমিন ও শোভন সরকার সঞ্চালিত ও প্রকাশিত অনলাইন,
৪। বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত, অক্টোবর ২০২৩ থেকে মার্চ ২০২৪ সময়কালের মধ্যে সংগৃহীত