চান মিয়া: বাউল রাজের গান ও সাধনার জীবন


ভূমিকা

বাংলার লোকসংস্কৃতিতে বাউলগান এক অমূল্য রত্ন। এই ধারার একজন উজ্জ্বল নক্ষত্র ছিলেন নেত্রকোণার বাউল রাজ চান মিয়া। তার সহজিয়া গান, সুরেলা কণ্ঠ ও মরমি সাধনা তাকে এনে দিয়েছিল অসংখ্য মানুষের ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা।

জন্ম ও জন্মস্থান

চান মিয়া জন্মগ্রহণ করেন নেত্রকোণা সদরের মৌগাতি ইউনিয়নের খাটপুরা গ্রামে, ১৩২৫ বঙ্গাব্দে। তার পিতার নাম ছিল মিয়া হোসেন আকন্দ এবং মাতার নাম চান্দের মা।

শিক্ষা জীবন

তিনি স্থানীয় বিদ্যালয় থেকে মাইনর পাস করেন। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় তার যাত্রা দীর্ঘ না হলেও, সঙ্গীতে তার আত্মনিবেদন ছিল গভীর ও নিখাদ।

কর্মজীবন

সঙ্গীত চর্চার শুরু চুচুয়া ফকিরবাড়ির রঙ্গু মিয়ার কাছে। পরবর্তীতে রশিদ-শিষ্য তৈয়ব আলীর নিকট থেকে বাউলগানে তালিম গ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন পূর্বনির্ধারিত সম্মানীতে মালজোড়া বাউলগান গাওয়ার প্রথম দিককার শিল্পীদের একজন। এছাড়া তিনি একজন কামেল পীর হিসেবে খেলাফত লাভ করেন কারী মহিউদ্দিন আলসেরপুরীর কাছ থেকে।

অবদান

চান মিয়ার গানে কৃষকের ভাষা, হৃদয়ের কথা ও মাটির ঘ্রাণ ছিল স্পষ্ট। তার গানের বই ‘সুরেশ্বরী চাঁন গীতিকা’‘আজাদ-চাঁন গীতিকা’ বাংলা লোকসঙ্গীতের সমৃদ্ধি ঘটিয়েছে। তিনি বাংলাদেশ বেতারের তালিকাভুক্ত শিল্পী ছিলেন। তার প্রায় ৪০-৫০ জন শিষ্য ছিল, যাদের মধ্যে বাউল সিরাজ উদ্দিন পাঠান অন্যতম।

পুরস্কার ও স্বীকৃতি

যদিও আনুষ্ঠানিক কোনো রাষ্ট্রীয় পুরস্কারের তথ্য নেই, তবে জনগণের ভালোবাসা ও 'বাউল রাজ' খেতাবই তার সর্বোচ্চ স্বীকৃতি।

মৃত্যু

১৩৯৯ বঙ্গাব্দের ২৮ শ্রাবণ তারিখে চান মিয়া পরলোক গমন করেন। তার মৃত্যুর মধ্য দিয়ে এক বিস্ময়কর সাধনার পরিসমাপ্তি ঘটে।

উপসংহার

চান মিয়া ছিলেন মাটি ও মানুষের শিল্পী। তার গান, জীবনদর্শন ও সাধনার চিহ্ন বাংলার লোকজ সংস্কৃতিকে আরো সমৃদ্ধ করেছে। বাউলগানের ইতিহাসে তার নাম চিরভাস্বর হয়ে থাকবে।

সহায়ক গ্রন্থ:
নেত্রকোণা জেলা চরিতকোষ – অনুপ সাদি ও দোলন প্রভা – ২০২৪

নেত্রকোণার লোকসাহিত্য ও সংস্কৃতি, সঞ্জয় সরকার, আবিষ্কার, ঢাকা, প্রথম প্রকাশ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

নেত্রকোণা মুখশ্রী, কাজী ইমদাদুল হক সম্পাদিত, প্রকাশক নেত্রকোণা জেলা সমন্বয় পরিষদ, ঢাকা, প্রকাশকাল মার্চ ২০০৫

নবীনতর পূর্বতন