ঐতিহাসিক রোয়াইলবাড়ি দুর্গ নেত্রকোনার কেন্দুয়ায় অবস্থিত একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান। ঈশা খাঁ, নছরত শাহ সহ বাংলার সুলতানদের শাসনামলের নানা ইতিহাস ধারণ করে আছে এই দুর্গ।
অবস্থান
- রোয়াইলবাড়ি ইউনিয়ন, কেন্দুয়া উপজেলা, নেত্রকোণা জেলা।
ছবি: উইকিপিডিয়া
যেভাবে যাবেন
ময়মনসিংহ, কিশোরগঞ্জ ও নেত্রকোণা থেকে বাস বা যে কোন ধরণের ছোটোখাটো যানবাহন নিয়ে পৌঁছা যায় রোয়াইলবাড়িতে। ঢাকা থেকে বাসযোগে নেত্রকোণা, নেত্রকোণা থেকে কেন্দুয়া। কেন্দুয়া পৌরসভা থেকে বাস/রিকসা/সিএনজি যোগে সাহিতপুর বাজার যেতে হবে। সেখান থেকে অটো/ইঞ্জিনচালিত যন্ত্র দিয়ে সরাসরি রোয়াইলবাড়ী বাজারে যাওয়া যায়। বাজার থেকে পায়ে হেটে বা রিক্সায় যাওয়া যায়।রোয়াইলবাড়ি দুর্গের ইতিহাস
- 'রোয়াইল' শব্দের অর্থ ‘ক্ষুদ্র অশ্বারোহী বাহিনী’, 'রোয়াইলবাড়ি' মানে ‘অশ্বারোহী বাহিনীর ঘাঁটি’।
- নছরত শাহ পালিয়ে এসে এখানে আশ্রয় নেন এবং এর নামকরণ করেন ‘নছরত ও জিয়াল’।
- এই অঞ্চল একসময় পরিচিত ছিল ‘নছরতশাহী পরগণা’ নামে।
- ঈশা খাঁ এখানে দুর্গ প্রতিষ্ঠা করেন ও পরবর্তীতে দেওয়ান জালাল এর সংস্কার ও মসজিদ নির্মাণ করেন।
প্রত্নতত্ত্ব ও আবিষ্কৃত নিদর্শন
- ১৯৯১-১৯৯৩ সালে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর খনন কাজ পরিচালনা করে।
- উদ্ধার করা হয়: সিংহদ্বার, পুকুর, পরিখা, বুরুজ, বারো দরজার ইমারত, জালাল মসজিদের ধ্বংসাবশেষ, কবরস্থান ইত্যাদি।
- মসজিদের ১৫টি গম্বুজ ও ১২টি দরজা ছিল। ছিল সূর্যমুখী ফুলের কারুকাজে সজ্জিত দেয়াল।
- দূর্গ এলাকাটি প্রায় ৪৬ একর জুড়ে বিস্তৃত, এবং তিন ভাগে বিভক্ত।
দর্শনার্থীদের জন্য আকর্ষণ
- ঐতিহাসিক স্থাপনার ধ্বংসাবশেষ ঘুরে দেখা।
- বেতাই নদীর পাড়ে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ।
- দুর্গ সংলগ্ন এলাকায় গড়ে উঠেছে রোয়াইলবাড়ি বাজার ও একটি মাদ্রাসা।
পর্যটকদের জন্য পরামর্শ
- এটি একটি সংরক্ষিত প্রত্নতাত্ত্বিক এলাকা, দয়া করে কিছু নষ্ট করবেন না।
- স্থানীয় গাইড থাকলে ইতিহাস জানা সহজ হবে।
- বর্ষাকালে রাস্তা কিছুটা কর্দমাক্ত হতে পারে, তাই জুতা ও পোশাক বুঝে পরিধান করুন।
উপসংহার
ঐতিহ্য, ইতিহাস ও শিল্পের মেলবন্ধনে রোয়াইলবাড়ি দুর্গ আমাদের প্রাচীন বাংলার এক অমূল্য প্রতীক। সুলতান হুসেন শাহ থেকে ঈশা খাঁর প্রতাপ—সবই যেন এখানের মাটিতে এখনো স্পন্দিত। যারা ইতিহাস ভালোবাসেন বা বাংলাদেশের অতীত ঐতিহ্য জানতে চান, তাদের জন্য রোয়াইলবাড়ি হতে পারে একটি অনন্য গন্তব্য।
তথ্যসূত্র -
নেত্রকোনার জাতীয় পোর্টাল - সম্পাদনায়: সঞ্জয় সরকার - লিংক
আরো জানতে - উইকিপিডিয়া ।