ইসলাম উদ্দিন : বাউলগান ও লোকসংগীতের জনপ্রিয় মুখ


ভূমিকা

ইসলাম উদ্দিন বয়াতি ছিলেন পূর্ব ময়মনসিংহ অঞ্চলের একজন খ্যাতিমান বাউল শিল্পী। তিনি শুধু গানে নয়, বাউলতত্ত্ব ও শাস্ত্রীয় সংগীতেও ছিলেন পারদর্শী। নাটক, চলচ্চিত্র ও বিজ্ঞাপনে তার গান মানুষকে মুগ্ধ করেছে।

জন্ম ও শিক্ষা

তিনি জন্মগ্রহণ করেন ৮ অক্টোবর ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দে নেত্রকোণার কেন্দুয়া উপজেলার সান্দিকোনা ইউনিয়নের খিদিরপুর গ্রামে। পিতার নাম আজমত আলী এবং মাতার নাম চান্দের মা। গ্রামের বিদ্যালয়ে প্রাথমিক শিক্ষা শুরু করে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেন।

সংগীত জীবনের শুরু

শৈশব থেকেই তিনি গানে মগ্ন ছিলেন। ছাত্রজীবনে মামা রঙ্গু মিয়ার গলায় গান শুনে সঙ্গীতের প্রতি আকৃষ্ট হন। পরবর্তীতে প্রখ্যাত বাউল আবেদ আলীর শিষ্য হয়ে গান ও বাউলতত্ত্বে দীক্ষা নেন। কৈশোরেই জনপ্রিয়তা লাভ করেন এবং গানকেই জীবিকার মাধ্যম হিসেবে বেছে নেন।

মালজোড়া বাউল ও জনপ্রিয়তা

তিনি আব্দুল মজিদ তালুকদার ও বাউল ইসরাফিলের সঙ্গে ‘মালজোড়া বাউলগান’ করেছেন। পূর্ব ময়মনসিংহ অঞ্চলের এই লোকগানের ধারাটি টিকিয়ে রাখার জন্য তিনি ছিলেন অন্যতম কণ্ঠ। বাউল শাস্ত্র, সৃষ্টিতত্ত্ব ও তত্ত্বভিত্তিক গান নিয়ে তার ছিল অগাধ জ্ঞান।

হুমায়ূন আহমেদের সঙ্গে সম্পর্ক

১৯৯২ সালে কেন্দুয়ার কুতুবপুর গ্রামে এক আসরে গান গেয়ে কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের নজরে আসেন। পরবর্তীতে তিনি তাঁর নাটক, চলচ্চিত্র ও বিজ্ঞাপনে গান ও অভিনয় করেন।

তিনি হুমায়ূন আহমেদের ‘উড়ে যায় বক পক্ষী’, ‘চন্দ্র কারিগর’, ‘মন্ত্রী মহোদয়ের আগমন শুভেচ্ছা স্বাগতম’, ‘এনায়েত আলীর ছাগল’, ‘অদেখা ভুবন’, ‘চৌধুরী খালেকুজ্জামানের বিশ্ব রেকর্ড’, ‘এভারেস্ট জয়’, ‘থ্রি-টু-ওয়ান জিরো অ্যাকশন’সহ ১৩টি নাটকে গান ও অভিনয় করেন।

তাছাড়া ‘ঘেটুপুত্র কমলা’ ও ‘নয়ন নম্বর বিপদ সংকেত’ চলচ্চিত্রে এবং তিনটি বিজ্ঞাপনচিত্রেও অংশগ্রহণ করেন।

অসুস্থতা ও মৃত্যু

২০১৮ সালের জুলাই মাসে স্ট্রোক করে পক্ষাঘাতগ্রস্ত হন। পরবর্তীতে অর্থাভাবে চিকিৎসা ব্যাহত হয় এবং মেয়ের পড়াশোনাও বন্ধ হয়ে যায়। ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২২ সালে নিজ বাড়িতে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

উপসংহার

ইসলাম উদ্দিন ছিলেন বাউল সংগীতের একজন প্রাণপুরুষ, যিনি নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন গান, সাধনা ও সমাজসেবায়। তিনি ছিলেন বাংলার মাটি ও মানুষের শিল্পী।

উৎস নির্দেশ

জাগোনিউজ২৪.কম |  দৈনিক প্রথম আলো | নেত্রকোণার বাউল কবি, হামিদুর রহমান

সহায়ক গ্রন্থ: নেত্রকোণা জেলা চরিতকোষ – অনুপ সাদি ও দোলন প্রভা – ২০২৪

নবীনতর পূর্বতন