ভূমিকা
আহসান আলী মোক্তার বা আচান আলী মোক্তার ছিলেন কেন্দুয়া তথা বৃহত্তর ময়মনসিংহ অঞ্চলের একজন প্রখ্যাত আইনজীবী, রাজনীতিক এবং সমাজসংগঠক। নিজের মেধা, সততা, ধর্মবিশ্বাস এবং আপসহীন নেতৃত্বের মাধ্যমে তিনি ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে আছেন।
জন্ম ও শিক্ষা
১৮৯৮ খ্রিস্টাব্দে কেন্দুয়া উপজেলার কচন্দরা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন আহসান আলী মোক্তার। তাঁর পিতার নাম ছিল নছির উদ্দিন। শৈশবকাল নিজ গ্রামেই কাটে। ১৯১৭ সালে তিনি কেন্দুয়া জয়হরি স্প্রাই ইনস্টিটিউশন থেকে ম্যাট্রিক পাস করেন। পরের বছর ১৯১৮ সালে ময়মনসিংহের আনন্দমোহন কলেজে ভর্তি হন এবং সাফল্যের সাথে পরীক্ষা উত্তীর্ণ হন।
আইনজীবী হিসেবে যাত্রা
আনন্দমোহন কলেজে বিএ ক্লাসে অধ্যয়নরত অবস্থায় নেত্রকোণার এলাহী নেওয়াজ খানের উৎসাহে তিনি মোক্তারি কোর্সে ভর্তি হন এবং সফলভাবে পাস করেন। এরপর ১৯২২ সালে নেত্রকোণা ফৌজদারী বারে যোগ দেন। অল্প সময়েই তিনি এক জন বিচক্ষণ, প্রভাবশালী ও সম্মানিত আইনজীবী হিসেবে সুপরিচিত হয়ে ওঠেন।
রাজনৈতিক ও সামাজিক অবদান
তিনি ছিলেন মুসলিম লীগপন্থী রাজনীতিবিদ। অধঃপতিত মুসলিম সমাজের মুক্তিসংগ্রামে তিনি অতন্দ্র প্রহরীর ভূমিকা পালন করেন। তাঁর চরিত্রে দুটি গুণ ছিল স্পষ্ট— আপসহীনতা ও ধর্মে অবিচল আস্থা।
তিনি 'ঋণ সালিশী বোর্ড' আন্দোলনের একজন সক্রিয় সংগঠক ছিলেন। ১৯৪৬ সালে তিনি অবিভক্ত বাংলার এমএলএ নির্বাচিত হন এবং ১৯৪৭ সালের স্বাধীনতা অর্জনের পূর্বপ্রস্তুতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন।
নেতৃত্ব ও প্রতিষ্ঠান গঠন
- নেত্রকোণা মহকুমা মুসলিম লীগের দীর্ঘদিনের সভাপতি
- নেত্রকোণা ফৌজদারী বারের সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন
- নেত্রকোণা কলেজ প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা
- এনডিএফ-এর নেত্রকোণা মহকুমা সভাপতি
- নেত্রকোণা শহরের প্রথম বিদ্যুতায়নে সক্রিয় অবদান
- নেত্রকোণা মালটি পারপাস সোসাইটি ও কলেজের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা
মৃত্যু
আহসান আলী মোক্তার ১৯৬৮ সালের ৬ এপ্রিল পরলোক গমন করেন।
উপসংহার
আহসান আলী মোক্তার একজন আইনজীবীই ছিলেন না, ছিলেন সময়ের চেয়ে এগিয়ে থাকা এক চিন্তাশীল নেতা। তাঁর শিক্ষা, নেতৃত্ব, আপসহীন মনোভাব ও সমাজচেতনা আজও আমাদের অনুপ্রেরণা দেয়।
উৎস নির্দেশ
সহায়ক গ্রন্থ: নেত্রকোণা জেলা চরিতকোষ - অনুপ সাদি ও দোলন প্রভা - ২০২৪
ইতিহাসের পাতায় কেন্দুয়া, খন্দকার সফিকুল ইসলাম, দুশা প্রকাশনী, ময়মনসিংহ, ২০১৩
ময়মনসিংহের চরিতাভিধান, দরজি আবদুল ওয়াহাব, ১৯৮৯