কালীকান্ত বিদ্যালঙ্কার : মোহনগঞ্জের গর্ব, স্মার্তশাস্ত্রের দিগ্বিজয়ী পণ্ডিত

ভূমিকা

কালীকান্ত বিদ্যালঙ্কার ছিলেন উনবিংশ শতাব্দীর একজন বিখ্যাত পণ্ডিত, লেখক ও স্মার্তশাস্ত্র বিশারদ। স্মার্ত রঘুনন্দনের মত খণ্ডনে তিনি যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন, তা বাংলার বৌদ্ধিক ইতিহাসে এক গৌরবময় অধ্যায়।

জন্ম ও পারিবারিক পটভূমি

১২১৮ বঙ্গাব্দে নেত্রকোণা জেলার মোহনগঞ্জ উপজেলার মাঘান গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পিতার নাম কার্তিকেয়চন্দ্র পঞ্চানন এবং মাতার নাম কাত্যায়নী দেবী। তার পিতামহ নারায়ণচন্দ্র ন্যায়বাগীশ ছিলেন বিখ্যাত পণ্ডিত এবং ষোড়শ শতাব্দীর সাধক পূর্ণানন্দ গিরি পরমহংস সরস্বতীর উত্তরসূরি।

শিক্ষাজীবন

মাত্র পাঁচ বছর বয়সে পিতার নিকট বিদ্যারম্ভ করেন। পরবর্তীতে মানশ্রী গ্রামের কমলাকান্ত বাচস্পতির নিকট কলাপ ও ব্যাকরণ অধ্যয়ন করেন। এরপর নবদ্বীপে গিয়ে কোনো এক অধ্যাপকের নিকট ন্যায় ও স্মৃতিশাস্ত্র পাঠ করে ‘বিদ্যালঙ্কার’ উপাধি লাভ করেন।

চতুষ্পাঠী স্থাপন ও স্মার্তশাস্ত্রের বিচারে অবদান

পড়াশোনা শেষে নিজ গ্রামে ফিরে চতুষ্পাঠী স্থাপন করে বহু ছাত্রকে শিক্ষা দেন। শিবপুরের তারাকান্ত ন্যায়রত্নের সঙ্গে স্মার্ত রঘুনন্দনের মত খণ্ডনের বিচার করেন। এ উদ্দেশ্যে বিক্রমপুর, নবদ্বীপ, কাশী ও কোচবিহারে গমন করে পণ্ডিতদের সঙ্গে আলোচনায় জয়লাভ করেন।

কোচবিহার রাজসভায় অবস্থান

কোচবিহার রাজ্যের মন্ত্রী শিবপ্রসাদ বক্সীর আমন্ত্রণে রাজসভায় অবস্থান করেন এবং সেখানে স্মৃতিশাস্ত্রের বিচারক হিসেবে খ্যাতি লাভ করেন। তাঁর রচিত কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ হল:

  • অষ্টাবিংশতিতত্ত্বাবশিষ্টঃ
  • উদ্বাহতত্ত্বাবশিষ্টঃ
  • প্রায়শ্চিত্ততত্ত্বাবশিষ্টঃ
  • তিথিতত্ত্বাবশিষ্টঃ

এই সব গ্রন্থ মুদ্রণের জন্য মন্ত্রী শিবপ্রসাদ অর্থানুকূল্য করেন এবং কালীকান্ত বিদ্যালঙ্কারকে বিভিন্ন স্থানে পাঠিয়ে তার মূল্যায়ন করান।

মৃত্যু

১২৭১ বঙ্গাব্দের মাঘ মাসে কালীকান্ত বিদ্যালঙ্কার পরলোকগমন করেন।

উপসংহার

কালীকান্ত বিদ্যালঙ্কার ছিলেন একজন যুগান্তকারী সংস্কৃত পণ্ডিত, যিনি শুধু স্মার্তশাস্ত্র বিশারদ ছিলেন না, বরং ছিলেন এক সাংস্কৃতিক ধারার বাহক ও গর্বিত উত্তরসূরি।

উৎস নির্দেশ

ময়মনসিংহের চরিতাভিধান, দরজি আবদুল ওয়াহাব

বঙ্গীয় সংস্কৃত অধ্যাপক জীবনী, শ্রীজয়ন্তকুমার ভট্টাচার্য

সহায়ক গ্রন্থ: নেত্রকোণা জেলা চরিতকোষ – অনুপ সাদি ও দোলন প্রভা – ২০২৪

নবীনতর পূর্বতন