সুসঙ্গের পণ্ডিত জমিদার ও লেখক মহারাজা কুমুদচন্দ্র সিংহ।

ভূমিকা

মহারাজা কুমুদচন্দ্র সিংহ ছিলেন সুসঙ্গ দুর্গাপুরের রাজবংশীয় জমিদার, যিনি শুধু শাসক নন, ছিলেন একজন পণ্ডিত, লেখক ও সংস্কৃতিসেবক। বাণীর আরাধনায় নিবেদিত জীবন তাঁর পাণ্ডিত্য ও নেতৃত্বকে স্মরণীয় করে রেখেছে।

জন্ম ও শিক্ষা

তিনি জন্মগ্রহণ করেন ১২৭৩ বঙ্গাব্দে নেত্রকোণা জেলার সুসঙ্গ দুর্গাপুরে, ঐতিহাসিক ব্রাহ্মণ রাজপরিবারে। ১৮৮৯ খ্রিস্টাব্দে কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে বিজ্ঞানে বিএ পাস করেন।

পাণ্ডিত্য ও সাহিত্যচর্চা

সংস্কৃত কাব্য, ব্যাকরণ, অলঙ্কার, দর্শন, জ্যোতিষ ও আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে তিনি সুপণ্ডিত ছিলেন। আরতি, বান্ধব, সৌরভ, সাহিত্য সংহিতা প্রভৃতি পত্রিকায় তাঁর প্রবন্ধ প্রকাশিত হতো। মৃত্যুর পর তাঁর প্রবন্ধ সংগ্রহ “কৌমুদী” নামে দুই খণ্ডে প্রকাশিত হয়, যা সম্পাদনা করেন তাঁর পুত্র ভূপেন্দ্রচন্দ্র সিংহ।

সামাজিক ও শিক্ষা-সংস্কৃতি সংগঠন

তিনি ছিলেন কলকাতা সংস্কৃত বোর্ডের সদস্য এবং বিভিন্ন শিক্ষা ও সংস্কারমূলক প্রতিষ্ঠানের নির্বাচিত সদস্য। ১৩১৮ বঙ্গাব্দে ময়মনসিংহে অনুষ্ঠিত বঙ্গীয় সাহিত্য সম্মিলনের অভ্যর্থনা সমিতির সভাপতি ছিলেন।

জাতীয় প্রতিনিধি হিসেবে সম্মান

১৯১১ সালে দিল্লি দরবারে তিনি পূর্ব বাংলার জমিদারদের প্রতিনিধি হিসেবে সম্রাটের দর্শনের অনুমতি লাভ করেন।

ব্যক্তিত্ব

তিনি ছিলেন পবিত্র চরিত্রের অধিকারী, মধুর স্বভাবের, পাণ্ডিত্যগুণে সর্বজনমান্য। অর্থবিত্তে সমৃদ্ধ হলেও সাহিত্য ও শিক্ষাচর্চাই ছিলো তাঁর জীবনের পরম তৃপ্তি।

মৃত্যু

১৩২২ বঙ্গাব্দের আশ্বিন মাসে, দুর্গাপুরে নিজ জন্মস্থানে তাঁর মৃত্যু হয়।

উপসংহার

মহারাজা কুমুদচন্দ্র সিংহ ছিলেন একাধারে রাজা, পণ্ডিত ও সংস্কৃতিসেবক। সুসঙ্গ রাজ্যের গৌরবময় ঐতিহ্যে তাঁর অবদান অবিস্মরণীয়।

উৎস নির্দেশ

ময়মনসিংহের চরিতাভিধান, দরজি আবদুল ওয়াহাব 

ভারতীয় ঐতিহাসিক জীবনীকোষ

সহায়ক গ্রন্থ: নেত্রকোণা জেলা চরিতকোষ – অনুপ সাদি ও দোলন প্রভা – ২০২৪

নবীনতর পূর্বতন