প্রবাদ প্রবচন


যে জাতির পুরাতত্ত্ব নেই, সে জাতির সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সমৃদ্ধ নয়। যে ভাষায় প্রবাদ প্রবচন নেই, সে ভাষারও পরিপূর্ণতা নেই।

প্রবাদ মূলত কোন নির্দিষ্ট ঘটনার সঙ্গে যুক্ত নয়, বরং তা সামাজিক মানুষের ব্যবহারিক জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার ফসল। উদাহরণস্বরূপ - চুরের দশদিন, গিরস্তের একদিন।
ভাবার্থ: পাপ কাজ কখনো চাপা থাকে না।

নেত্রকোণার সংগৃহীত প্রবাদগুলোতে উঠে এসেছে ব্যক্তি ও সমাজ জীবনের প্রথা, রীতি-নীতি, ধর্ম ও বিদ্রুপ থেকে শুরু করে সম্পর্ক, প্রেম ও স্নেহ মায়ার মতো মানবিক বিষয়গুলোও স্থান পেয়েছে। প্রতিটি প্রবাদ প্রবচনের অন্তরালে যেমন গল্প, কাহিনি ও বিবৃতি থাকে, তেমনি থাকে দুঃখ-কষ্ট, হাসি-কান্না, হিংসা, বিদ্বেষ, তামাশা, দুর্ভোগ, সমস্যা, সমাধান, অভিজ্ঞতা, কৌতুক ইত্যাদি ভাবধারা।

চন্দ্রকুমার দে সংগৃহীত 'মৈমনসিংহ গীতিকা' অধ্যুষিত ময়মনসিংহ তথা নেত্রকোনা অঞ্চলের মানুষের হৃদয়ানুভূতি, আবেগ খুব তীব্র। সে কারণেই তাদের হৃদয়ানুভূতি দিয়েই লোকজ্ঞানের চর্চা হতো সেখানে। এখানকার গ্রামীণ জীবনের অভিজ্ঞতালব্ধ কথাগুলোই আমাদের কাছে প্রবাদ। জীবন-জগৎ সম্পর্কে তাদের তীব্র অনুভূতির বহিঃপ্রকাশ যুগযুগ ধরে প্রবাদ হিসেবে বিরাজ করছে এবং এ অঞ্চলের মানুষের সামাজিক জীবনে আজও এসব প্রবাদ বিদ্যমান রয়েছে। 

(০১)
পরের মন্দে থাকলে মতি,
আগে হবে নিজের ক্ষতি।
ভাবার্থ: অন্যের ক্ষতি করার ইচ্ছে মনের মধ্যে পোষন করলে আগে নিজেরই ক্ষতি হয়।

(০২)
আকালের তাল বড় মিডা।
আঞ্চলিক শব্দার্থ: আকাল-অসময়/দুর্ভিক্ষ, মিডা-মিষ্টি।
ভাবার্থ: দুষ্প্রাপ্য জিনিসের কদর বেশি।

(০৩)
পরের ঘরের পিডা,
খাইতে বড় মিডা,
নিজের ঘরের পিডা,
খেকি দরদ্যা ইডা।
আঞ্চলিক শব্দার্থ: পিডা-পিঠা, মিডা-মিষ্টি, থেকি-খিরকী, দরদ্যা-দরজা দিয়ে।
ভাবার্থ: নিজের ঘরের জিনিসের কদর কম, আর অন্যের কাছ থেকে পাওয়া জিনিসের কদর বেশি।

(০৪)
কার প্রসাদে খাছ বান্দি?
ঠাকুর ছিনলেনা।

আঞ্চলিক শব্দার্থ: খাছ-খাস,
ভাবার্থ: অকৃতজ্ঞতা বুঝাতে এটা বলা হয়ে থাকে।

(০৫)
দ্যাশের পুডিডা ভালা,
বিদেশের রওডাও ভালানা।

আঞ্চলিক শব্দার্থ: দ্যাশ-দেশ, পুডি-পুটি মাছ, রও-রুই মাছ
ভাবার্থ: নিজের দেশে পরিবার স্বজন নিয়ে পুটি মাছ খাওয়া ভাল, কিন্তু বিদেশে গিয়ে রুই মাছ খেলেও পরিবার পরিজন দূরে থাকে। এই অর্থে এ কথা বলা হয়।

(০৬)
নাইয়ার এক নাও,
আনাইয়ার শতেক নাও।

ভাবার্থ: যার কিছু নেই সবকিছুতেই তার মালিকানা এই রূপক অর্থে। যার সম্পদ নেই, সকলের সম্পদই সে নিজের মনে করে।

(০৭)
খাডিলে ধন,
জাগিলে ত্বরন,
হুইলে মরন।

আঞ্চলিক শব্দার্থ: খাডিলে-খাটলে/কষ্ট করলে/পরিশ্রম করলে, হুইলে-শুয়ে পড়লে।
ভাবার্থ: পরিশ্রম করলে ফলাফল পাওয়া যায়, আর অকমর্ণ হয়ে ঘুমালে হতাশা আর মৃত্যু আসে।

(০৮)
ছাল নাই পুটকিত বাঘ ঢাইশ্যা নাম।
আঞ্চলিক শব্দার্থ: ছাল-চামড়া, পুটকি-পাছা, বাঘ ঢাইশ্যা-বাঘ ঢাসা।
ভাবার্থ: নিজের ক্ষমতার চেয়ে বেশি অহমিকা দেখানো, কিংবা বড়ত্ব দেখানো।

(০৯)
থাকতে কাছি, আরাইলে দা।
আঞ্চলিক শব্দার্থ: আরাইলে-হারালে
ভাবার্থ: এমন মানুষের কথা বলা হয়েছে, বেঁচে থাকাকালীন সময়ে যার কোন দাম থাকেনা, কিন্তু মারা যাবার পর কদর বেড়ে যায়।

(১০)
চান্দের লাইগ্যা হেন্দেও ছেলাম পায়।
আঞ্চলিক শব্দার্থ: চান্দের-চাঁদের, লাইগ্যা-জন্য, হেন্দে-নিচু, ছেলাম-সালাম
ভাবার্থ: ক্ষমতার কারনে একজন খারাপ মানুষও সম্মান পায়।

(১১)
কলমে কায়স্থ চিনি
গোঁপেতে রাজপুত,
চিকিৎসক চিনতে পারি
যার অষুধ মজবুত।

আঞ্চলিক শব্দার্থ: গোঁপ-গোফ, অষুধ-ঔষধ
ভাবার্থ: স্ব স্ব বৈশিষ্ট্য দিয়ে মানুষকে মূল্যায়ন করা যায়।

(১২)
গুড় আন্ধ্যাইরেও মিডা লাগে।
আঞ্চলিক শব্দার্থ: আন্ধ্যাইরে-আঁধারে, মিডা-মিষ্টি।
ভাবার্থ: যা ভাল, তা সকল অবস্থানেই ভাল।

(১৩)
পীরের মাইর ধীরে ধীরে,
খদার মাইর সইয়া,
পাকতোনা গলতো না,
পড়বো খৈয়া খৈয়া।

আঞ্চলিক শব্দার্থ: মাইর-মার, খদা-খোদা।
ভাবার্থ: বিজ্ঞব্যক্তিরা ধীরগতিতে ভাল কাজ করে।

(১৪)
হাডা হিলে ঘষাঘষি,
মইচ্যের কাম শেষ।

আঞ্চলিক শব্দার্থ: হাডা-পাটা, হিল-শিল, মইচ্যের-মরিচের, কাম-কাজ।
ভাবার্থ: দুপক্ষের মারামারিতে সাধারন মানুষের ভোগান্তি।

(১৫)
মুখের দুষে মাইর গলে,
এই মাইর পথে পথে পড়ে।

আঞ্চলিক শব্দার্থ: দুষে-দোষে, মাইর-মার।
ভাবার্থ: স্বভাবের কারনে ফলভোগ।

(১৬)
সাজতে সাজতে হেউচ্যা রাজা।
আঞ্চলিক শব্দার্থ: হেউচ্যা-ফিঙ্গে
ভাবার্থ: প্রস্তুতি নিতে নিতে - কাজের সময় চলে যাওয়া।

(১৭)
থাকরে কুত্তা আমার আশে,
ভাত দিব তরে পুষ মাসে।
আঞ্চলিক শব্দার্থ: কুত্তা-কুকুর, আশে-আশায়, তরে-তোকে, পুষ-পৌষ।
ভাবার্থ: অনেক সময় পর্যন্ত কাউকে আশা দিয়ে রাখা।

(১৮)
দুধের সাধ ঘোলে মিডে না।
আঞ্চলিক শব্দার্থ: মিডে-মিটে।
ভাবার্থ: নকলে আসলের সুখ পাওয়া যায়না।

(১৯)
ভাই বড় ধন,
রক্তের বাধন,
যদি হয় পিরথক,
নারীর কারণ ।
আঞ্চলিক শব্দার্থ: পিরথক-পৃথক।
ভাবার্থ: ভাই ভাইয়ে যে হৃদ্যতা থাকে তা ভেঙে যার নারীর কারনে।

(২০)
নির্ধনের ধন,
অর্থবের যৈবন।
আঞ্চলিক শব্দার্থ: নির্ধন-গরীব, যৈবন-যৌবন।
ভাবার্থ: নির্ধন ব্যাক্তি হঠাৎ ধনী হলে আর শারীরিকভাবে চলতে ফিরতে অসমর্থ ব্যাক্তি যৌবন ফিরে ফেলে ধরাকে সরা জ্ঞান মনে করে।

(২১)
পরের কথায় লাত্তি চড়,
নিজের কথায় ভাত কাপড়।
আঞ্চলিক শব্দার্থ: লাত্তি-লাথি।
ভাবার্থ: পরের চর্চায় থাকলে কেবল ঝগড়া, বিবাদ, অপমান সহ্য করতে হয়, নিজের চর্চায় চললে অন্ন বস্ত্রের সংস্থান হয়।

(২২)
বাঁশ মরে ফুলে,
মানুষ মরে বুলে।
আঞ্চলিক শব্দার্থ: বুলে-কথায়।
ভাবার্থ: বাঁশে ফুল ধরলে সে বাঁশ মরে যায়, আর মানুষ তার বেপরোয়া কথার জন্য বিপদে পতিত হয়, মারা যায়।

(২৩)
মিডা কথায় ছিড়া ভিজেনা।
আঞ্চলিক শব্দার্থ: মিডা-মিষ্টি, ছিড়া-চিড়া।
ভাবার্থ: কাজ করতে হলে খরচ করতে হয়, কেবল মিষ্টি কথায় কাজ হয়না।

(২৪)
যারে দেখতে নারি, তার চলন বেহা।
আঞ্চলিক শব্দার্থ: চলন-চাল-চলন, বেহা-বাঁকা।
ভাবার্থ: যার উপর বিরক্ত থাকে, তার সামান্য ত্রুটির প্রতিও লক্ষ্য রাখা হয়।

(২৫)
যে মাছটা ছুইট্যা যায়, হেইডাই বড় থাহে।
আঞ্চলিক শব্দার্থ: ছুইট্যা-ছুটে, হেইডাই-সেটাই, থাহে-থাকে।
ভাবার্থ: কোন জিনিস আয়ত্বের বাইরে চলে গেলে অতি ক্ষুদ্র জিনিসকেও লোকে খুব বড় বা বেশি দরকারী মনে করে।

(২৬)
দুই টেহার পুটকি, চাইর টেহার লুডা।
আঞ্চলিক শব্দার্থ: টেহা-টাকা, পুটকি-পাছা, চাইর-চার, লুডা-বদনা।
ভাবার্থ: আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি অথবা সক্ষমতার চেয়ে লোক দেখানো মনোভাব বেশি।

(২৭)
বাপ দাদার নাম নাই,
চাঁন মোল্লা বেওয়াই।
আঞ্চলিক শব্দার্থ: বেওয়াই-বেয়াই।
ভাবার্থ: তিরষ্কার, নিন্দা অর্থে এটা বলা হয়। যার নিজের কোন কিছুই নাই অথচ বড় কিছু ভাবা শুরু করে।

(২৮)
কাউয়‍্যার বাসায় কুলিরচাও.
জাত বিদ্যায় করে রাও।
আঞ্চলিক শব্দার্থ: কাউয়‍্যার-কাকের, কুলিরচাও-কুকিলের বাচ্চা, রাও-ডাক
ভাবার্থ: যে যেখানেই অবস্থান করেনা কেন জাতীয় স্বভাব তার পরিবর্তন হয়না।

(২৯)
মানিকে মানিক চিনে,
শুয়রে চিনে কচু।
আঞ্চলিক শব্দার্থ: শুয়র-শূকর
ভাবার্থ: যার যা প্রয়োজন।

(৩০)
জাত কান্দে জাতের লাগি,
কুত্তায় কান্দে ভাতের লাগি।
আঞ্চলিক শব্দার্থ: কুত্তা-কুকুর, কান্দে-কান্না করে
ভাবার্থ: যার যা প্রয়োজন সে বিষয়েই আকুতি জানায়।

(৩১)
আমিও ফকির অইলাম, গাঁও আহাল অইল।
আঞ্চলিক শব্দার্থ: আহাল আকাল, অইল হইল
ভাবার্থ: নিজে সম্বলহীন থাকায় অন্যকে ধার না দেয়ার জন্য অভাবের বান করা।

(৩২)
আক্কলে খায়া মাডি,
বাপে পুতে কামলা খাডি।
আঞ্চলিক শব্দার্থ: মাডি-মাটি, খাডি-খাটি
ভাবার্থ: নিজের নির্বুদ্ধিতায় কষ্টভোগ করা।

(৩৩)
ঝি বাচলে জামাই,
খাইয়া লইয়া কামাই।
আঞ্চলিক শব্দার্থঃ কামাই-রোজগার।
ভাবার্থ: মেয়ে বেঁচে না থাকলে জামাই কোন আত্মীয়ই নয়।

(৩৪)
কম পানির মাছ বেশী হানিত পড়লে,
গাপোস গোপস করে।
আঞ্চলিক শব্দার্থ। হানি-পানি।
ভাবার্থ: অযোগ্য মানুষ যোগ্য কাজের অপচেষ্টা।

(৩৫)
হুদ্দর হওরী সালাম পাইনা,
মায়ই হওরী উহি জুহি বায়।
আঞ্চলিক শব্দার্থ: হুদ্দর-সহোদর, হওরী-শ্বাশড়ী, উহি জুহি-উঁকি-ঝুঁকি।
ভাবার্থ: অবাঞ্চিত, অবাস্তব প্রত্যাশা করা।

(৩৬)
যার আছে ধান,
তার কথা বড় টান।
আঞ্চলিক শব্দার্থ। টান-অনুরাগ।
ভাবার্থ: অহংকার বুঝাতে। যার সম্পদ আছে তার কথা সবাই শুনে।

(৩৭)
মুখের দোষে মার গলে,
হেই মার পথে পথে পরে।
আঞ্চলিক শব্দার্থ: হেই-সেই, মার-ভাতের ফেন।
ভাবার্থ: মানুষের মুখের দোষেই বদনাম বাইরে ছড়ায়।

(৩৮)
এমনেই করে চুরি,
আরো করে সিনাজুরি।
আঞ্চলিক শব্দার্থ: সিনাজুরি-গলা উচু করে বলা।
ভাবার্থ: চুরি করে আবারো বড়ত্ব প্রকাশ করা।

(৩৯)
আইগ্‌গা পানি লইনা, মুইত্তা গলা পানি।
আঞ্চলিক শব্দার্থ: আইগ্‌গা-মল ত্যাগ, মুইত্তা-প্রস্রাব করা।
ভাবার্থ: প্রয়োজনীয় কাজের চেয়ে অপ্রয়োজনীয় কাজে বেশী প্রাধান্য দেওয়া।

(৪০)
চুডের বেডা মাইরে টস।
আঞ্চলিক শব্দার্থ: চুড-ধাক্কা, টস-ঢিলা।
ভাবার্থ: যে বেশী কথা বলে, সে কাজ করে কম।

(৪১)
ঘর লেইপ্পা দয়ারো পেক।
আঞ্চলিক শব্দার্থ: লেইপ্পা-লেপে, পেক-কাদা।
ভাবার্থ: শেষে মন্দ।

(৪২)
বেয়ারদিন লাউ গুডা লাগানো।
আঞ্চলিক শব্দার্থ: বেয়ারদিন-বিয়ের দিন, লাউগুডা-লাউয়ের বীচি।
ভাবার্থ: যে সময়ে যে কাজ করা উচিৎ নয়।

(৪৩)
কাশে পাদ ঘুরে না।
আঞ্চলিক শব্দার্থ: পাদ-বায়ু ত্যাগ।
ভাবার্থ: বায়ু ত্যাগের শব্দ কাশি দিয়ে যেমন ঢাকা যায় না, তেমনি সত্যকে মিথ্যা দিয়ে ঢাকা যায় না।

(৪৪)
কর্তায় কইছে চুদির ভাই,
আনন্দের আর সীমা নাই।
আঞ্চলিক শব্দার্থ: কর্তা-মালিক, চুদির ভাই-একটি গালি
ভাবার্থ: সম্পদশালী ব্যক্তি গরীব ব্যক্তিকে গালমন্দ করলেও অপমানবোধ করেনা।

(৪৫)
অইবো পুতে ডাকবো বাপ,
পরে যাইবো মনের বাপ।
আঞ্চলিক শব্দার্থ: অইব-হবে।
ভাবার্থ: যা নাই তা হবে, সে আশায় থাকা।

(৪৬)
যার রান্দা খাইছি না,
সে বড় রান্দুনি।
যারে কোন দিন দেখছি না,
সে বড় সুন্দরী।
আঞ্চলিক শব্দার্থ: রান্দা-রান্না।
ভাবার্থ: অদেখা বস্তু দেখার প্রতি আগ্রহ বেশি।

(৪৭)
চোরে চোরে আলি,
এক চোরে বেয়া করে,
আর এক চোরের হালী।
আঞ্চলিক শব্দার্থ: আলি- হালি, হালী- শালী, বেয়া- বিয়ে
ভাবার্থ: যার সঙ্গে যার মনের মিল।

(৪৮)
বউ পালনের মুরাদ নাই,
কিলানির গোসাই।
আঞ্চলিক শব্দার্থ: মুরাদ-সামর্থ।
ভাবার্থ: সম্পদহীন রাগী মানুষ।

(৪৯)
যার দফাডে মাডি ফাডে,
তার পুটকি বিলাইয়ে চাডে।
আঞ্চলিক শব্দার্থ: দফাডে-দাপটে, মাডি-মাটি, কাডে-কাটে, বিলাই-বিড়াল, চাডে-চাটে
ভাবার্থ: ক্ষমতাবান মানুষ, ক্ষমতা শূন্য হওয়া।

(৫০)
মড়লের বাড়িত থাহি,
মরছে মড়লের মা,
লগে লগে না কান্দলে,
জাগা দিতো না।
আঞ্চলিক শব্দার্থ: থাহি-থাকি, লগে-সঙ্গে, কান্দলে-কান্না করলে, জাগা-স্থান
ভাবার্থ: তোষামুদি করে নিজের স্বার্থ আদায় করা।

(৫১)
আসল ঘরের চাল নাই,
রান্ধাঘরে চান্দুয়া।
আঞ্চলিক শব্দার্থ: রান্ধাঘরে-রান্নাঘরে।
ভাবার্থ: মূল বিষয়ের চেয়ে উপবিষয়কে প্রাধান্য দেয়া।

(৫২)
দারগায় ডাকছে চাচি,
আমিকি আর ভবে আছি।
আঞ্চলিক শব্দার্থ: ডাকছে-ডেকেছে।
ভাবার্থ: ক্ষমতাবান মানুষের সঙ্গে নিজেকে সম্পর্কিত করে অহংকারী ভাবা।

(৫৩)
আত্তির লেদা দেইখ্যা খাডাশের কুঁথানি।
আঞ্চলিক শব্দার্থ: আত্তির-হাতির, লেদা-মল, দেইখ্যা-দেখে, কুঁথানি-কুত দেয়া।
ভাবার্থ: অন্যের কাজ দেখে নিজে খবর হওয়া।

(৫৪)
কামলার বৌয়ের ভাঙ্গা ঘর,
বৈদ্যের বৌয়ের নিত্য জ্বর।
আঞ্চলিক শব্দার্থ: কামলা-কাজের মানুষ।
ভাবার্থ: নিজের দায়িত্বের প্রতি অবহেলা।

(৫৫)
জয় কালে ক্ষয় নাই,
মরবার কালে অষুধ নাই।
আঞ্চলিক শব্দার্থ: অষুধ-ঔষধ।
ভাবার্থ: স্বাভাবিক বৃদ্ধি ও পতন কেউ রোধ করে রাখতে পারেনা।

(৫৬)
জাগিয়া যে ঘুমায়-
তারে জাগান দায়।
ভাবার্থ: ইচ্ছাকৃত অবচেতন মানুষকে সচেতন করা যায়না।

(৫৭)
পথে পাইলাম কামার,
দা গড়াইয়া দে আমার।
ভাবার্থ: কোন কাজের লোক দেখলেই কাজের কথা মনে পড়ে।

(৫৮)
মানুষ মরে দোআশায়,
গরু মরে দোঘাসায়।
আঞ্চলিক শব্দার্থ: দোআশায়-দু রকমের আশা।
ভাবার্থ: লক্ষ্য এক জায়গায় স্থির করতে হয়। তা না হলে সফলতা আসে না।

(৫৯)
আক্কল যায় না মইলে,
স্বভাব যায় না ধুইলে।
আঞ্চলিক শব্দার্থ: মইলে-মরলে।
ভাবার্থ: স্বভাব পরিবর্তনা হয় না।

(৬০)
আদরের ভাত লবন দেয়াও ভালা।
আঞ্চলিক শব্দার্থ: ভালা-ভাল।
ভাবার্থ: সম্মানজনক জায়গায় কম মুনাফাতেও কাজ করা ভাল।


তথ্যসূত্র -
হাসান ইকবাল রচিত “নেত্রকোণার প্রবাদ-প্রবচন ও লোকছড়া” গ্রন্থ থেকে নেওয়া হয়েছে। নেত্রকোণার প্রবাদ-প্রবচন ও লোকছড়া সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে এই বইটি সহায়ক হতে পারে।






নবীনতর পূর্বতন